সমাপ্তির বেদনা
#সমাপ্তির_বেদনা
~প্রসেনজিৎ পাল।
~প্রসেনজিৎ পাল।
সেদিন কলেজ শেষে মৃণাল বাড়ি ফিরলো একটু রাত করেই,বেশ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে তাই মোজা পড়া অবস্থাতেই সোফাতে অল্পসময়ের জন্য শুয়ে পড়লো মৃণাল। এরপর মৃণালের মা এক গ্লাস ঠান্ডা জল ফ্রিজ থেকে বের করে দিল,সারাদিন শহরের রৌদ্রে ঘোরাঘুরির পর ঠান্ডা জল পেয়ে ঢকঢক করে তৃপ্তি ভরে জল খেতে লাগলো মৃণাল, আর জল খাওয়া শেষ হতেই মৃণালের মা মৃণালের মাথার কাছে বসে নানান গল্পে মেতে ওঠে। আর মৃণালের চুলে আঙুল দিয়ে আদর করতে থাকে। এইদিন গল্পের মধ্যে বিষয় যা ছিল তা হল, পাশের ফ্লাটে নতুন একটি পরিবার এসেছে, এবং পরিবারের সাথে মৃণালের মায়ের কেমনভাবে যেন চেনা পরিচিত,তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছোট্ট একটি বর্ননা মৃণালকে শুনিয়ে দিল মৃণালের মা।মায়েরা সরাদিন বাড়িতে থেকে ঘরোয়া কাজের জন্য গল্প করার মতো সময় ও লোক পেয়ে ওঠেন না তাই মায়েরা সন্তানদের সাথে একটু গল্প করতে বেশিই ভালোবাসেন তাই মৃণালের সাথে বকবক করতে করতে গল্প করতে থাকেন মৃণালের মা। অবশেষে মৃণালের মায়ের গল্প শেষ এবং মৃণালের ক্লান্তি একটু কমলে মৃণাল ফ্রেস হয়ে,এবং ডিনার শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুুতি নিতে থাকে ।
পরদিন সকালে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো।মৃণাল সকাল ৮/৯ টার আগে কোনো মতেই ঘুম থেকে ওঠেনা আর আগেরদিন রাতে ভুল করে অ্যালার্ম দিতেও ভুলে গেছিল মৃণাল। কিন্তু পরদিন ভোরে অদ্ভুত মিরাক্কেল ঘটলো, মৃণাল ঘুম থেকে উঠলো নিজে থেকেই ভোর ৫ টাতে,কোনো অ্যালার্ম বা মায়ের গলা ফঁাটানো চিৎকার ছাড়াই। আসলে ভোরে ওঠা ছেলে মৃণাল নই,তবুও জানালার পাশ থেকে ভেসে আসা, একটি গান শুনতে পেল মৃণাল, কোনো এক মেয়ের কন্ঠে..ওর এই ২১ বছর বয়সে ওদের ফ্লাটে আগে এমনধরনের কখনো কোনোদিন গান শোনেনি ভোরবেলা। জানালাটা আস্তে আস্তে ঘুমভরা চোখে খুলতেই গানের গলাটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কি সুন্দর! দরদী কন্ঠ,কোমল হারমনিয়ামের ধির গতির আওয়াজ, সাথে কয়েকটা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে একটা অসাধারণ অনুভুতি জেগে উঠলো মৃণালের মধ্যে, প্রতিটা গানের লাইন মৃণালের মনকে কেমন ছুয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে মৃণাল সফল হয় বুঝতে যে গানটি কোন ঘর থেকে গাওয়া হচ্ছে এবং কেবা গাইছে!!। এবং শেষে নিশ্চিত হলো যেমনভাবে তা হলো, আগেরদিন সন্ধ্যাতে ওর মায়ের মুখে শুনেছিল একটি নতুন পরিবারের কথা এবং এও শুনেছিল ওই পরিবারে বছর ১৯ এর একটি মেয়ে আছে, আর গলা শুনে কিছুটা আন্দাজ করে মৃণাল নিশ্চিত হলো যে গানটি হইতো ওই মেয়েটিই গায়ছে। মেয়েটিকে দেখার জন্য মৃণালের মন ছটফট করতে লাগলো,আসলে ভোরে এমন সুন্দর গান আগে কখনো শোনেনি মৃণাল। জানালা দিয়ে পাশের ফ্লাটে মৃণাল উঁকি মারতেই দেখতে পেল প্রকৃত গায়িকাকে, কিন্তু মুখ নয় জানালার দিকে উল্টোভাবে বসে গান করছে মেয়েটি তাই খোলা বিশাল চুলগুচ্ছ এবং গানের সুর ঠিক করার জন্য ডান হাতটির ওঠানামাই দেখতে পাওয়া গেল। মেয়েটির সম্পূর্ণ মুখ দেখার জন্য মৃণাল আরো উতলা হয়ে উঠলো। আসলে মৃণাল এতটাই অলস,একেবারে ধৈর্য নেই বললেই চলে,তাই ভোরবেলা প্রায় আধ ঘন্টা একটি মেয়ের কন্ঠে গান শুনতে জানালার ধারে বসিয়ে রাখার মতো কি এমন ক্ষমতা আছে মেয়েটির গানে!! একথা ভাবতেই মৃণাল আরো অবাক হতে লাগলো,আরো উতলা হয়ে উঠলো।
ধিরে ধিরে আকাশের উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকলো,ভোর থেকে সকাল হতেই কলেজের সঠিক সময় হতেই কলেজের উদ্দ্যেশ্যে মৃণাল রওনা দিল। বাসে থাকা এবং কলেজের ক্লাস চলাকালীনও মৃণাল কিছুতেই ভোরের মায়াবী সুরেলা কন্ঠে গানের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। সারাদিনটা কেটে গেল ভোরের ওই ঘটনার কথা ভেবে। কলেজ শেষ করে মৃণাল যখন বাড়ি ফিরলো তখন অবাক করার মতো দেখলো ওদের রুমে তালা দেওয়া কলিং বেল অনেক্ষন বাজানোর পরেও কেও উত্তর দিচ্ছে না। তারপর মৃণাল ওর মায়ের কাছে ফোন করতেই জানতে পারে ওর মা এবং বাবা দুজনেই পাশের নতুন ফ্লাটে আছেন,মৃণালদের বাড়ির তিনজনকেই সন্ধ্যাতে নিমন্ত্রন করেছেন ওই পাশের ফ্লাটের নতুন পরিবারটি চা-কফি আর একটু আড্ডা দেওয়ার জন্য,চাবি মায়ের কাছে তাই উপায় না থাকায় মৃণালকেও যেত হলো ওই নতুন পরিবারদের ফ্লাটে। মৃণাল গিয়ে জানতে পারলো ভোরের গায়িকার সম্মন্ধে, মেয়েটির নাম অন্তরা, সত্যি বলতে মৃণাল প্রেমে পড়ে গেছে মেয়েটির। যেমন সুন্দর গানের গলা তেমনই সুন্দর দরদী মুখমন্ডল,এক পলকে দেখলেও মুখটা মনে রাখার মতোই।WhatsApp নম্বর এবং কিছু ক্ষনিকের আলাপের মাধ্যমে বন্ধু হয়ে উঠলো মৃণাল ও আন্তরা। আর এভাবেই চলতে থাকলো ওদের বন্ধুত্ব.....
বেশ কয়েকমাস ধরেই কথোপকথন হচ্ছে WhatsApp ,ফোন বা বাড়ির আড্ডাতে মৃণাল ও অন্তরার,কিন্তু এই অল্প কদিনেই অনেক অনেক আপন বন্ধু হয়ে উঠেছে দুজনে। দুজন দুজনকেই খুব বিশ্বাস করতে লাগলো,এক শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হলো ওদের মধ্যে। আর এভাবেই চলতে থাকলো বেশ কয়েকমাস,কিন্তু মৃণাল যে অন্তরাকে ধিরে ধিরে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে অন্তরারও অজান্তে।বন্ধুত্ব সম্পর্ক হলো প্রেমের থেকে দামী,একবার হারিয়ে গেলে বন্ধুত্বকে খুজে পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার,আর তাই মৃণাল অন্তরাকে ওর মনের কথা বলার সাহস পায়নি।
বেশ কয়েকমাস ধরেই কথোপকথন হচ্ছে WhatsApp ,ফোন বা বাড়ির আড্ডাতে মৃণাল ও অন্তরার,কিন্তু এই অল্প কদিনেই অনেক অনেক আপন বন্ধু হয়ে উঠেছে দুজনে। দুজন দুজনকেই খুব বিশ্বাস করতে লাগলো,এক শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হলো ওদের মধ্যে। আর এভাবেই চলতে থাকলো বেশ কয়েকমাস,কিন্তু মৃণাল যে অন্তরাকে ধিরে ধিরে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে অন্তরারও অজান্তে।বন্ধুত্ব সম্পর্ক হলো প্রেমের থেকে দামী,একবার হারিয়ে গেলে বন্ধুত্বকে খুজে পাওয়া খুবই কঠিন ব্যাপার,আর তাই মৃণাল অন্তরাকে ওর মনের কথা বলার সাহস পায়নি।
মৃণালকে অন্তরার মা-বাবা খুব বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন,এর থেকে বেশি বিশ্বাস করে অন্তরা। আর তাই নেলপালিস থেকে শাড়ি,বই বা গহনা কেনার সময় যার সাথে চোখ বুঝিয়ে অন্তরা যেতে পারে সে হলো মৃণাল,অন্তরার মৃণালদা। সমস্ত সমস্যার সমাধানে অন্তরা যার সাথে প্রথমে কথা বলে সে হলো মৃণাল। একদিন কলেজস্ট্রিটে বই কিনতে গিয়ে একটা রোমান্টিক ঘটনা ঘটলো ওদের দুজনের মধ্যে,বই কেনার পর বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ বৃষ্টিতে দুজনেই ইচ্ছাকৃতভাবে একসাথে বৃষ্টিস্নাত হয়ে বাড়ি ফিরলো,এমনকি বইগুলোর কথা ভুলেই গেছিল ওরা, বাড়ি এসে দেখলো বইগুলো দলা পাকিয়ে গেছে। আর তাই পরদিন আবার কলেজস্ট্রিটের অলিগলিতে দুজন একসাথে বেরিয়ে পরে বই কিনতে,এমনকি একসাথেই কফিহাউসে ম্যারাথন অড্ডার সাথে সাথে এক গ্লাস করে কফি পান। আর কলকাতার বুকে এমন ছোট্ট ছোট্ট ভ্রমন ওদের প্রতি সপ্তাহের রুটিনে পরিনত হতে থাকলো। আর মৃণাল অন্তরার ব্যপারে এতটাই সিরিয়াস যে সেটা অন্তরা ঠিক লক্ষ করলো,এবং এও লক্ষ করলো নিজের দিকে খেয়াল রাখে না এমন একটা ছেলে অবাক করার মতো ওকে খুব খুব কেয়ার করছে। এবং অবশেষে বন্ধুত্বের মধ্যেও দুজন দুজনকে গোপন রেখে ভালোবেসে ফেলে। এবং এখন অন্তরাও মৃণালকে একদিন না দেখে থাকতে পারে না। প্রতিদিনই সকালের গানের রেওয়াজে মৃণালের ঘুম ভাঙানো,প্রতিদিন জানালা দিয়ে একে অপরকে চুরি করে দেখা এসবই চলতে থাকলো,আসলে মেয়েরা চাপা স্বভাবের হয়ে থাকে তাই অন্তরাও মৃণালকে কিছু বলে উঠতে পারেনি.....
এভাবেই কেটে গেলো প্রায় ১ বছরেও বেশি.....
এভাবেই কেটে গেলো প্রায় ১ বছরেও বেশি.....
সামনেই কালীপূজা তাই কলকাতার নাম করা সব সোনার দোকানে ডিসকাউন্টের ভিড় জমে। তাই অন্তরার মা-বাবা অন্তরার জন্য কিছু গহনা গিফ্ট দেওয়ার কথা ভাবলো এবং তাই মৃণালের সাথে অন্তরাকে পাঠিয়ে দিল কলকাতার নামকরা একটি সোনার দোকানে,সাথে ২৯ হাজার টাকা। কিন্ত আজ ওদের ভালোবাসার প্রকাশ ঘটবে কিন্তু একটা শূন্যতার মাধ্যেমে। অন্তারাকে মৃণাল পছন্দ করে দিল,গলার হারটা এবং মৃণাল এও বলেছিল লক্ষ্মী পূজার দিনে হারটি যেন অন্তরা পরে,ওকে নাকি পুরো লক্ষ্মী মতো দেখতে লাগবে। আর কেনাকাটা শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়,বাড়ি ফেরার সময় ঘটলো এক বিপত্তি,৩ জন গুন্ডা টাইপের লোক ওদের ফলো করছে,এবং হঠাৎ ওদের সামনে এসে হাতে বড়ো ছুরি নিয়ে রাস্তা আটকে দেয়। এবং বলে সোনার হারটি ওদের দিয়ে দিতে, কিন্তু না মৃণাল কিছুতেই গহনা ওদের দেবে না,তাই শক্ত করে ধরে আছে অন্তরার শান্তিনিকেতন থেকে কেনা ব্যাগটি। বেশ কিছুক্ষন ধরে চলতে থাকে গুন্ডা এবং মৃণালের মধ্যে মাড়ামাড়ি এদিকে অন্যরা নিরুপায় হয়ে তীক্ষ্ম শব্দে চিৎকার করতে থাকে "হেল্প! হেল্প!" বলে কিন্তু না একদুইবার চিৎকার করার পরে সবকিছু বুঝে ওঠার আগেই সবশেষ ।মৃণালের পেটে সোজা ছুরি চালিয়ে দেয় গুন্ডারা আর ছুরি একবার না দুই তিনবার চালিয়ে দেয় পেটের এদিন থেকে ওদিক,খুব ভয়ংকরভাবে....
মৃণাল মাটিতে লুটিয়ে পরলো,জোঁকে কাঁচা লবন ছিটিয়ে দেওয়ার মতোই ছটফট করতে থাকলো মৃণাল, গলগল করে রক্ত বেরিয়ে যেত থাকলো পেট থেকে।
"ভালো থেকো অন্তর, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি....আর হইতো এই কথাটা বলার সময় পাবো না!"- মৃণাল,মৃতপ্রায় অবস্থাতে বললো,
মৃণাল মাটিতে লুটিয়ে পরলো,জোঁকে কাঁচা লবন ছিটিয়ে দেওয়ার মতোই ছটফট করতে থাকলো মৃণাল, গলগল করে রক্ত বেরিয়ে যেত থাকলো পেট থেকে।
"ভালো থেকো অন্তর, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি....আর হইতো এই কথাটা বলার সময় পাবো না!"- মৃণাল,মৃতপ্রায় অবস্থাতে বললো,
"তোমার কিছু হবে না মৃণাল দা!তোমার কিছু হবে না!! তোমাকে আমিও খুব ভালোবাসি মৃণাল দা!!" -অন্তরা বললো এবং কাঁদতে কাঁদতে জরিয়ে ধরলো মৃণালকে......
অন্তরা মাটিতে বসে অসহায়ের মতো কান্না করতে থাকলো, আর মৃণালকে কোলে মাথা রাখিয়ে পেটের রক্ত ওর ওড়না দিয়ে চাপার চেষ্টা করতে থাকলো।মৃণাল ওর জীবিত থাকার সময় অন্দাজ করতে পেরে বেশি দেরি না করে হঠাৎ মৃণাল ওর আঙুলে লাগা গরম রক্ত দিয়ে সোজা কম্পিত হাতে অন্তরার ফাঁকা সিথিতে রক্তের সিন্দুরের ভরিয়ে দিল.....আর তারপরেই দুটো চোখ বন্ধ হয়ে গেল চিরতরের জন্য.....
এরপর অন্তরা পাগলের মতো 'মৃণালদা,মৃণালদা' বলে শরীরে যত শক্তি ছিল সবটা দিয়ে ডাকতে থাকলো,অার পাগলের মতো ছটফটাতে থাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পেল না.....
এরপর অন্তরা পাগলের মতো 'মৃণালদা,মৃণালদা' বলে শরীরে যত শক্তি ছিল সবটা দিয়ে ডাকতে থাকলো,অার পাগলের মতো ছটফটাতে থাকলো কিন্তু কোনো সাড়া পেল না.....
(সকলকে অনুরোধ করছি,বানান কোথাও ভুল হয়ে দয়া করে ক্ষমা করবেন এবং ভুলটি ধরিয়ে দেবেন তবে বাধিত থাকবো)
*=========©PROSENJIT========*
সমাপ্তির বেদনা
Reviewed by M Raj Editing Tips
on
May 20, 2018
Rating: 5
