ভালোবেসে ভরসা রেখো

              ভালোবেসে ভরসা রেখো
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥

রাত পোহালেই রিমি আর রাজ এর বিয়ে। এ দিনটার জন্য রিমি অনেক অপেক্ষা করেছিলো। তাই আজ ওর সবচেয়ে খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু ও যেকোন কারণ এ খুশি নয়। বিয়ে টা মন থেকে মেনে নিতে পারছে না কিছুতেই। যেভাবে হোক বিয়ে টা আটকাতে হবে.... কিন্তু কিভাবে??
সকাল বেলায় দধিমঙ্গল হওয়ার সময় কেঁদেই ফেললো ও। সবাই ভাব লো যে মা বাবা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে কাঁদছে। ওর মা খুব আদর করে ওকে শেষ বারের মত খাইয়ে দিলো।
রাজ বিয়ে এর পিঁড়ি তে বসে আছে। কিন্তু রিমি এখনো এলো না কেন ?
- লগ্ন পেরিয়ে যাচ্ছে কন্যা কে নিয়ে আসুন.... পুরোহিত মশাই আবার তাড়া দিলেন। কিন্তু রিমি কোথায়? রিমির মা কে দেখা গেল কাঁচুমাচু মুখ করে নেমে এল। হঠাৎ রাজ এর বাবা আর রাজ কে একান্তে ডেকে নিয়ে গেল রিমির বাবা। রাজ এর হাত এ একটা চিঠি ধরিয়ে দিল। রাজ চিঠি টা পরে চমকে উঠল।
প্রিয় বাবা
আমি জানি তোমাদের মুখ এ এভাবে চুনকালি মাখিয়ে চলে যাওয়া ঠিক নয়। এ চিঠি টা যখন তুমি পাবে তখন আমি অনেক দূরে.... আমাকে খুঁজেও কোনও লাভ নেই.... খুঁজে পাবে না। আসলে এই বিয়ে টা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমি বলতে পারব না। আর রাজ কে আমার জন্য দুঃখ করতে মানা কর। ওর কপালে আমার থেকে অনেক better কেউ জুটবে। আমি ওর জন্য ঠিক নই। ভালো থেকো সবাই।
By the way আমায় phone করে কোন লাভ নেই। কারণ আমার phone no আমি পাল্টে নিয়েছি। তাই পুরোনো টায় phone করলে আর পাবে না।
ইতি
তোমাদের রিমি
আজ 2 টো বছর কেটে গেছে। না রাজ আর অন্য কাউকে বিয়ে করে উঠতে পারেনি। আসলে বিয়ের উপর থেকে আস্থা উঠে গেছিল ওর। কিন্তু সেই ঘটনার পর রিমি কে পাগলের মত খুঁজে চলেছে ও, একটা মাত্র প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। সেদিন কি এমন হয়েছিলো যে ওকে এভাবে চলে যেতে হল। যদি একবারও বলত রাজ কে যে ওর কোন অসুবিধা আছে তাহলে কি রাজ বিয়ে করতে জোর করত? রাজ কি ওমন ছেলে? যাই হোক এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাওয়া খুবই দরকার রাজ এর।
Delhi branch এর transfer letter টা হাতে নিয়ে রাজ ভাবতে থাকলো এবার বোধহয় রিমি কে ভুলে যেতেই হবে। একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো ওর। ভোলা যে কতটা শক্ত তা এত দিনে খুব ভালোই বুঝে গেছে রাজ।
Company এর দেওয়া নতুন quarter টা বেশ ভালোই। সাজানো গোছানো। ইস যদি রিমি টা আজ থাকতো তাহলে কত ভালোই না হত। এমন ই একটা সংসার এর স্বপ্ন ই তো দেখেছিল ও। ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো রাজ এর। Quarter টা থেকে বাইরে একটু বেড়াতে বেরুলো ও। পাশেই একটা ngo আছে। রিমি ও তো একটা ngo র member ছিল। এসব কাজ করতে খুবই ভালোবাসতো মেয়ে টা। আবার রিমি র কথা মনে পড়ে গেলো.... আসলে রিমি কে এক মুহূর্ত ও ভুলে থাকতেই পারে না ও। নিজেই হেসে ফেললো রাজ।
Ngo টায় গিয়ে ওখানকার ব্যবস্থা পত্র দেখে হা হয়ে গেল রাজ। প্রচুর মানুষ এর চিকিৎসা চলছে, কোথাও বা অনাথ বাচ্চাদের পড়ানো হচ্ছে। মাত্র 2 বছর খোলা হয়েছে এটা আর এত সুন্দর ব্যবস্থা! অবাক হতেই হল রাজ কে। তার থেকেও বেশি অবাক হলো একটা অদ্ভূত ঘটনা জেনে। এই njo টি যিনি khulechilen তিনি নিজেই একটি হাসপাতাল এ গত 1.5 বছর ধরে মৃত্যু র সাথে পাঞ্জা লড়ছে। কোমা য় আছেন উনি। রাজ njo র ম্যানেজার কে গিয়ে সব কিছু জিজ্ঞাসা করলো..... তবে উনি যা বললেন সব শুনে রাজ এর জগত টা কেঁপে উঠলো। উনার বক্তব্য টা ছিল কিছুটা এমন :
- " আমি একদম শুরু থেকেই এখানে আছি। যিনি এই njo খোলেন তার ছোটবেলার বন্ধু ছিলাম আমি। খুব ভালো বান্ধবী ছিল ও আমার। কিন্তু ছোট্ট বয়সেই আমি কলকাতা থেকে delhi চলে আসি। তবে fb র দৌলতে আবার আমাদের পুরোনো বন্ধুত্ব তাজা হয়। হঠাৎ একদিন ও Delhi তে আমার বাড়ি চলে আসে। আমি তো ওকে দেখে খুবই অবাক হই। কারণ আমি যতদূর জানতাম ওই দিন ওর বিয়ে ছিল। ওকে জিজ্ঞেস করি যে তুই হঠাৎ এখানে কেন? ও আমায় যা বলে সেটা শুনে আমি খুবই অবাক হ ই ও দুঃখ পাই। " এই বলে একটু থামলেন Mr যাদব।
-" কেন অবাক হলেন? " জিজ্ঞেস করলো রাজ।
আবার বলতে শুরু করলেন mr যাদব
_" ও বলে যে ওর brain tumer হয়েছে। আর maximum 6 মাস আয়ু ওর। ও নিজের lover কে আর মা বাবা কে দুঃখ দিতে চায় নি। ওর মতে যদি ও এই বিয়ে টা করে তাহলে ওর lover এর জীবন শুধু শুধু নষ্ট হবে। এর থেকে ভালো যে ও ওদের থেকে দূরে চলে আসুক। আর ওর মা বাবা র কাছেও মেয়ে মরে যাওয়ার থেকে মেয়ে র নিরুদ্দেশ থাকা অনেক ভালো। last after all একটা আশা থাকবে তাদের যে তাদের মেয়ে বেঁচে আছে.... যেখানে আছে ভালো আছে... স্বেচ্ছায় চলে গেছে। নইলে দুঃখে ওই বুড়ো মানুষ 2 তো হয়তো মরেই যাবে। আর এই last 6 মাস এভাবে ওদের তিলে তিলে মরতে দেখতে ও পারবে না "
-" আচ্ছা কিন্তু মেয়ে টা তো ওর lover এর কথা একবার ভাবতে পারত? তাকে তো সব বলতে পারত? " চোখে একরাশ জল নিয়ে কথা গুলো বললো রাজ।
-" হ্যাঁ ভেবেছিল তো। ও মনে করেছিলো যে ওর lover ওকে ঠগ ভেবে ওর থেকে দূরে সরে যাবে। কয়েক মাস পর হয়তো ওকে ভুলেই যাবে দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে। আর ও না করলেও ওর বাড়ির লোক বিয়ে দেবে। আর মানুষ তো ভালোবাসার কাঙাল। ওর বউ ওকে ভালোবাসলে ও ঠিক ওকে ভুলে যাবে...." এক নিশ্বাস এ কথা গুলো বললো Mr যাদব।
-" এত বছর এর সম্পর্কে ও মেয়ে রা ছেলে দের চিনতে পারেনা। একটা প্রশ্ন করতে পারি? "
-" করুন "
-" মেয়ে টার নাম কি রিমি বোস? "
-" হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কি করে জানলেন? "
-" আমি জানবো না? আমিই তো তার হবু বর ছিলাম... আমি ই রাজ সেন। কি এই নামটাই নিশ্চয়ই বলেছিলো রিমি?" মুখে একটা অদ্ভূত হাসি এনে বললো রাজ।
Mr যাদব পুরো হা হয়ে গেলেন। এমন টা যে কখনও হতে পারেন ভাবেননি তিনি। এই 1.5 বছর অনেকেই রিমির কাহিনী জানতে চেয়েছে। কিন্তু কোনও দিন যে এমন একটা পরিস্থিতির সামনে এসে সে দাঁড়াবে কখনো ভাবেনি।
-" আচ্ছা রিমি njo টা তৈরি করলো কি করে? টাকা কোথায় পেলো?" রাজ এর প্রশ্নে চমক ভাঙে mr যাদব এর....
-" ওর বিয়ের গয়না দিয়ে.... প্রায় 15 লাখ টাকার গয়না ছিল ওদের। সব কিছু নিয়ে এসেছিল রিমি। actually ও এই গয়না গুলো বেচে যে টাকা পায় সেটা bank e রেখে পরে bank এর delhi branch থেকে তুলে নেয়। এরপর আমার বাড়িতে খোলা হয় এটা। তারপর ধীরে ধীরে এত বড় হয়ে ওঠে সংস্থা টা। "
এরপর Mr যাদব এর সাথে hospital যায় রাজ। room এর মধ্যে রিমি শুয়ে আছে। মন ভরে ওকে দেখলো রাজ। এই তো ওর বউ ঘুমাচ্ছে। যখন উঠবে তখন তো রাজ কেই প্রথম খুঁজবে ও। তাই আজ থেকে এই hospital টাই রাজ এর সংসার.... বউ যেখানে থাকে সংসার তো সেটাই হয় নাকি।
রচনাটি পাঠ করে আনন্দ উপভোগ করুন

No comments:

Powered by Blogger.