সারপ্রাইজ




সারপ্রাইজ




মেরা মন ইয়ে বাতা দে তু
কিস্ ওর চলা হে তু
ক্যায়া পায়া নেহি তুনে
ক্যায়া ঢুন্ড ঢু-উ -উ .....আআআ ধুরর, আবার সুরটা আটকে গেল, কিছুতেই সুরটা মিলছে না। রাইসিং স্টার এর ওই মেয়েটির গলায় কি সুর, কি দারুণ গানটা গায়, আর আমার কিছুতেই মিলছে না........ । গুগল থেকে সার্চ করা গানের লিরিক্স এর খাতাটা বন্ধ করে দিল মিমি, নিজের ওপর খুব রাগ হচ্ছে, এতবার করে সুরটা মনে করার চেষ্টা করছে কিছুতেই সুরটা মনমতো ওই টিভি র মেয়েটার মতন হচ্ছেনা।গানটা ওকে তুলতেই হবে, ও ভাবল
একবার টিভিটা খুলে দেখিতো অ্যাড টা দিচ্ছে কিনা! ! টি ভি টা খুলতেই শুরু হল প্যানপ্যানানি ঘ্যানঘ্যানানি সিরিয়াল, ও বসে আছে কখন ওই রিয়্যালিটি শো এর অ্যাড টা দেবে আর ও সুরটা আরেকবার ঝালাই করে নেবে ।ভাবতে ভাবতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল মিমি, হঠাৎ সৌমির চিৎকারে ওর চমক ভাঙল ।
-এত সকালে টিভি চালিয়ে কি করছিস মিম! সারাদিন পড়াশোনা নেই শুধু গান আর ওই টিভি , সামনে যে এক্সাম সে খেয়াল আছে? যাও গিয়ে পড়তে বসো, রেজাল্ট খারাপ হলে তোমার গানের খাতা কিন্তু আমি ছিঁড়ে দেব বলে রাখলাম তোমায়.......
মিমি বাধ্য মেয়ের মতন টিভি বন্ধ করে পড়ার ঘরে চলে গেল, মুখের সামনে বইটা সাজিয়ে আবার ভাবতে লাগলো সুরটা, মেরা মন ইয়ে বাতা দে তু.............
.
দশ বছরের মিমি, সৌমিতা আর দর্পণের একমাত্র মেয়ে । ওদের ছোটখাটো হাসিখুশি পরিবার.ওদের দুজনেরই মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ।সৌমিতার ইচ্ছে মিমি বড় ডান্সার হবে ।
.
সৌমিতার ছোটোবেলা থেকেই নাচের খুব শখ ছিল, ওর বাবা ওকে অনেক সাপোর্ট ও করেছিল ।কিন্তু উন্নতির শিখরে পৌছবার আগে হঠাৎই ওর বাবা হার্ট অ্যাটাক এ মারা যায় আর ওর মা তাড়াতাড়ি করে দর্পন এর সাথে ওর বিয়ে দিয়ে দেয়, তারপর সংসারের নানা পর্বের ঝুট ঝামেলায় ওর শখ স্বপ্ন সব অধরাই থেকে গেল ।
মিমি জন্মানোর পরে ও আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল, ভাবল ওর শখ ওর মেয়ের মধ্য দিয়ে পূরণ করবে, ওর মেয়ে যে ওরই অংশ ।
নিজের স্বপ্ন সফলের জন্য সৌমিতা খুব ছোটো থেকেই মিমির নাচের তালিম দেওয়া শুরু করে, কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় ও সফল হয়নি, মেয়ের যে নাচে কোনো মনই নেই, মিমির ঝোঁক বেশি গানের প্রতি নাচ ওর পছন্দ না ।
.
মিমির যে গানের প্রতি কতটা ভালোবাসা সেটা সৌমিতা বুঝতে পারে । যেকোনো জায়গায় কোনো সুন্দর গান বাজলেই ও সব কাজ ভুলে ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে খুব মন দিয়ে শুনতে থাকে । গুগলে সার্চ করে গানের লিরিক্স লিখে রাখে । গুনগুন করে সুর মিলিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায় যতক্ষণ না ও সঠিক গানটা গাইতে পারছে । সৌমিতা ও যে নাচের প্রতি ঠিক এমনটাই দুর্বল ছিল এখনও আছে । সেদিন যদি বাবা মারা যাওয়ার পর মা অতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে না দিত ওর তাহলে হয়তো এতদিনে ও একজন সফল নৃত্যশিল্পী হয়ে উঠত । কিন্তু ভাগ্য ওর সাথে ছিলনা, তাইতো মেয়ে হওয়ার পর ওর স্বপ্ন নতুন করে জেগে উঠেছিল কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে মিমি ওর সাথ দিলনা ওর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল ।.
.
মিমি পড়ার টেবিলে মাথা রেখে একমনে ওই গানটার কথা ভেবে যাচ্ছে, হঠাৎই সৌমি ঘরে ঢোকায় ও খানিকটা ভয় পেয়ে ধরফরিয়ে উঠে বসল । সৌমি মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলল, কি হয়েছে মিম? শরীর খারাপ লাগছে নাকি? মিমি সৌমিতাকে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা গলায় বলল, মা, ও মা আমাকে তোমরা গান শেখাবে? আমি তোমাদের সব কথা শুনব, ভালো করে পড়াশোনা করবো , নাচ শিখবো মন দিয়ে ,আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল মিমি, থামিয়ে দিল সৌমিতা, তোমার সামনে এক্সাম পড়তে বসো, এইসব অবান্তর কথা মাথা থেকে দুর করো ।সৌমিতা কথাটা বলে চলে গেলো আর মিমির মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো ।
.
সেদিন রাতে সৌমিতার কিছুতেই ঘুম আসছিল না, মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে ও ভাবতে লাগলো, আমি কি মেয়েটার ওপর একটু বেশিই জোর খাটাচ্ছি!! আমিতো শুধু আমার স্বপ্ন সত্যি করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এটাতো আমার স্বপ্ন ওর স্বপ্ন নয়, আমি ওর স্বপ্নে বাধা হতে পারিনা । ভাবা মাত্রই ও দর্পণ কে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল, দিপু .... অ্যাই দিপু ওঠো একটু ..
ঘুমমাখা গলায় দর্পণ বলল, কি হলো? এত রাতে ডাকছো কেনো? সৌমিতা বললো আমরা আমাদের স্বপ্ন মিমির ওপরে চাপিয়ে ভুল করছি বুঝলে! আমাদের ওর স্বপ্নের কথাটাও ভাবতে হবে,
দর্পণ বললো, তুমি কি চাও?
সৌমিতা উজ্জ্বল মুখে বললো, কালকেই ওকে একটা গানের স্কুলে ভর্তি করে দেব, কি বলো!?
দর্পণ সায় দিলোনা, বললো, কাল না পরশু , পরশু দিন মিমির জন্মদিন, এটা ওর সারপ্রাইজ গিফট হবে ।
সৌমিতা দর্পণ কে জড়িয়ে ধরে বললো, একদম ঠিক বলেছো তুমি ।
.
আজ মিমির জন্মদিন , সকাল থেকেই ও খুব খুশি, রাত বারোটায় ওর মা বাবাই ওকে উইশ করেছে , কেক কেটেছে , বিকেলে বন্ধুরা আসবে, একটা ছোটোখাটো পার্টি ও হবে ।সৌমিতা মিমি কে বললো চটপট রেডি হ মিম আমরা একটা জায়গায় যাব আজকে ।
-কোথায় মা? আমরা তো আজকে বাড়িতেই এনজয় করি সারাদিন ।
-তাড়াতাড়ি রেডি হ, সা-আ-র-প্রাইজ আছে একটা ।
মিমি কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে সৌমিতা ও দর্পণের সাথে বেরিয়ে গেল ।
.
ওদের গাড়িটা একটা বিশাল দোতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। মিমি সৌমিতাকে বললো, এটা কার বাড়ি মা? সৌমিতা একটু হেসে বললো, ভিতরে গেলেই বুঝতে পারবি.মিমি দর্পণ আর সৌমিতার সাথে বাড়িটার মধ্যে প্রবেশ করলো, ওরা যত ভিতরে ঢুকতে লাগলো একটা সুন্দর সুর ভেসে আসতে লাগলো , মিমি খুব মন দিয়ে সুরটা শুনতে লাগলো, খুব চেনা সুর "তুমি রবে নীরবে..... " এই গানের সুরটাই কেউ সেতারে বাজাচ্ছে । ওরা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতেই গুরুজি ওদের স্বাগত জানালেন । মিমি তখনও সুরের মায়ায় আচ্ছন্ন,সৌমিতা মিমি কে একটু টোকা দিয়ে বললো তোর আজ থেকে গানের তালিম শুরু হলো,কেমন সারপ্রাইজ বল?মিমি মাকে জড়িয়ে ধরলো, তিনজনের চোখের কোণেই জল, সৌমিতা বললো আজ তোর শখ পূরণ করলাম, অনেক বড়ো হ, অনেক কথা হয়েছে এবার যা গিয়ে গুরুজি কে প্রণাম করে শুরু কর, আজ থেকে তোর শখের ভেলা নদীতে ভাসলো, লক্ষ্যে পৌঁছবার দায়িত্ব তোর ।
গুরুজিকে প্রণাম করে, মিমি গুরুজির হাত ধরে জীবনের প্রথম সুর তুললো .......
তুমি কেমন করে গান কর হে গুনী
আমি অবাক হয়ে শুনি..............
রচনাটি পাঠ করে আনন্দ

1 comment:

  1. সারপ্রাইজ - মনোলেখা >>>>> Download Now

    >>>>> Download Full

    সারপ্রাইজ - মনোলেখা >>>>> Download LINK

    >>>>> Download Now

    সারপ্রাইজ - মনোলেখা >>>>> Download Full

    >>>>> Download LINK m0

    ReplyDelete

Powered by Blogger.